একাত্তরের বীরাঙ্গনা
উৎসর্গ
আমার পরম শ্রদ্ধেয় জান্নাতবাসী আব্বা-মা
আলহাজ্ব রমজান আলী মিয়া
ও
মোসাঃ হালিমা খাতুন-কে
যাঁদের স্নেহ-আশীর্বাদে আমি নিত্য সিক্ত।
লেখকের অন্যান্য বই
- অন্তরে অনির্বাণ-গল্পগ্রন্থ (২০০০)
- আমার দেখা জেনেভা ও প্যারিস-ভ্রমণকাহিনী (২০০৮)
আপন কথা
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, সংকলনে প্রকাশিত ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গল্পগুলিকে এক সুতোয় গেঁথে রাখবার বাসনায় আমার দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ “একাত্তরের বীরাঙ্গনা” প্রকাশিত হলো। পুরনো ফাইলপত্র ঘাঁটতে গিয়ে ১৯৭০ সালে পূর্বদেশে প্রকাশিত “বিতর্কিত সংজ্ঞা ” নামে গল্পটি পেয়ে গেলাম। সময়ের বড় ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও গল্পটি গ্রন্থে সন্নিবেশ করতে পেরে ভালই লাগছে। ‘মমতা প্যাটেল’ গল্পটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত। সত্যর পেছনেও সত্য থাকে যা এখানে অপ্রকাশ্য। গল্পে রূপ দিতে গিয়ে ঘটনার পাত্র-পাত্রীর নাম-ধাম পরিবর্তন যেমন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে, তেমন আমাকেও অনেকটা কল্পনার আশ্রয় নিতে হয়েছে। গ্রন্থের আরো বেশ কয়েকটি গল্প সত্যাশ্রয়ী। পড়তে গেলে আশা করি পাঠক তা অনুমান করতে পারবেন। আমার গল্পের প্রথম পাঠক প্রফেসর খালেক। প্রথম সমালোচকও তিনি। তবে আমার একটা বদ অভ্যাস যা একবার লিখে ফেলি তা ভালো হোক অথবা মন্দ হোক না কেন, সেখান থেকে বড় একটা সরে আসতে পারি না । তাই গল্পগুলি যেমন ছিল প্রায় তেমন অপরিবর্তীত রেখে গ্রন্থিত হলো।
গ্রন্থটি নির্ভুল করবার চেষ্টা করেছি। গ্রন্থটি যদি ভালবেসে পাঠক কাছে টেনে নেন, ভালোলাগা নিয়ে পড়েন, তবেই আমার আনন্দ তাতেই হবে আমার শ্রম সার্থক।
গ্রন্থটির প্রকাশক জনাব গোলাম মোস্তফাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। প্রকাশনার দায়িত্ব পালন করেছে হাক্কানী পাবলিশার্স, প্রচ্ছদ এঁকেছেন দিপক রায়। সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
রাশেদা খালেক
সূচিপত্র
- মমতা প্যাটেল ১১
- মতিলাল ২১
- মরণফাঁদ ৩১
- বিমুগ্ধ প্রাণের ছোঁয়ায় ৩৫
- বিতর্কিত সংজ্ঞা ৪১
- ফুলজান বিবির ঘর-বসতি ৫০
- তহুরা এবং একটি চিরকুট ৫৭
- শেকড় ৬৭
- জনম দিনের বারতা ৮০
- রাতের রজনীগন্ধা ৮৬
- নিশানা ৯৪
- আমিরন বিবি চলে যায় ১০২
- একাত্তরের অমানিবাস ১০৬
মততা প্যাটেল
মমতা মাই ডিয়ার, লুক! লুক! হাউ সুইট ইয়োর বেবি। মমতা ইউ আর গ্রেট, ইউ আর এ লাকি মাদার।
কথাগুলো যেন দূর থেকে ভেসে আসছে। শুনতে পাচ্ছে মমতা, কিন্তু চোখ খুলতে পারছে না। দু’চোখের পাতা জড়িয়ে রাজ্যের ক্লান্তি, রাজ্যের ঘুম। আবারো শুনতে পেল, মাই ডিয়ার, লুক! লুক আফটার ইয়োর বেবি...। এরপর মমতা আর কিছু শুনতে পেল না। গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল। পরদিন জ্ঞান ফিরতে নার্স ডাকল। তোমার একটি বেবিগার্ল হয়েছে। হাউ সুইট, দেখবে? মমতা কিছইু না বলে আবার চোখ বুজল। দুটো দিন এমনি ঘোর আচ্ছন্নতায় কাটল। এখন কিছুটা সুস্থ।
মিসেস মার্গারেট প্যাটেল শিশুটিকে গোলাপি কম্বলে পেঁচিয়ে পায়ে পায়ে এগিয়ে এসে ডাকেন-
মমতা, মাই ডিয়ার চাইল্ড। দেখো তোমার বেবি কত সুন্দর হয়েছে। ওকে কোলে নাও। গড ব্লেস ইউ।
মমতা চোখ খোলে না। ওর বোজা চোখের পাতা গড়িয়ে দরদরিয়ে জল নামে। নার্স ঘুমন্ত বাচ্চাকে কটে শুইয়ে দেয়। মার্গারেট চেয়ার টেনে মমতার পাশে বসে। মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
মাই সুইট ডার্লিং এমন করবে না। গড সব দেখছেন। তিনি এংগরি হবেন। তুমি কত লাকি। মা হতে পেরেছ। তুমি মেয়ের নাম বলছ না। আমি ওর নাম রাখলাম মারিয়া প্যাটেল। তোমার পছন্দ হয়েছে তো?
সাতদিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেল মমতা। এ কয়দিন হাসপাতালের ডাক্তার নার্সরা সব দেখাশোনা করেছে। বাসায় আসার পর সকল দায়িত্ব পড়েছে মার্গারেট প্যাটেল ও জন স্যামুয়েল প্যাটেলের ওপর। তবে হাসপাতাল থেকে বেলা দশটায় একজন নার্স আসে ঘণ্টা খানেকের জন্য। বাচ্চার গোসল, ফিডার খাওয়ানো, ন্যাপি বদলানো, ওষুধ খাওয়ানো ইত্যাদি কাজগুলো করে যায় এবং মার্গারেটকে শিখিয়ে দেয়। মার্গারেট অতি দ্রুত শিখে নেয়। এরপর আর নার্সের দরকার হবে না। বাচ্চার বয়স বারদিন। মমতা এই বারদিনেও বাচ্চাকে কাছে নেয়নি। ওর এই অস্বাভাবিক আচরণে কেউ কিছু মনে করেনি। ডাক্তার বলেছেন, ওর ওপর কোন চাপ দেয়া যাবে না। অপেক্ষা করতে হবে। সময় হলে ও নিজে থেকে বাচ্চাকে গ্রহণ করবে সেটাই হবে মা ও সন্তানের জন্য মঙ্গলজনক। বাচ্চাটা তাই মার্গারেটের ঘরে থাকে।
মার্গারেট একটি শপিংমলে একাউন্ট সেকশনে কাজ করে। খুবই কর্মঠ, দায়িত্ববান এবং আত্মপ্রত্যয়ী। বাচ্চার কারণে ছুটি নিয়েছে। বাচ্চার দেখাশোনা, মমতার সেবা-শুশ্রƒষা, রান্না-বান্না ঘর সংসারের যাবতীয় কাজে সর্বক্ষণ তাকে ব্যস্ত থাকতে হয়। সন্ধ্যার পর জন স্যামুয়েল জব থেকে ফিরে এসে চা খেয়ে মারিয়াকে কোলে তুলে নেয়। অপটু হাতে যতটা পারে সাহায্য করে।
আদর করে বলেÑ মমতা, দেখো আমার এই গ্রান্ডডটার একদিন অনেক বড় হবে। আমি ওকে সেইভাবেই মানুষ করব। ওকে নিয়ে তোমরা গর্ব করবে।
মার্গারেট সেদিন রান্নার কাজে ব্যস্ত। মারিয়া হঠাৎ ঘুম ভেঙে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। কাঁদছে তো কাঁদছেই। থামবার নাম নেই। মার্গারেট রান্নাঘর থেকে চিৎকার করে বলতে থাকে-
Ñমারিয়া, ও মাই সুইট মারিয়া ডোন্ট ক্রাই, ডোন্ট ক্রাই।
কিন্তু কে শোনে কার কথা। মারিয়া কেঁদেই চলেছে। মমতা এতক্ষণ শুয়ে শুয়ে বাচ্চার কান্না শুনছিল। আর শুয়ে থাকতে পারে না। পায়ে পায়ে এগিয়ে যায়। বুকের দুধে ওর জামা কাপড় ভেজা। আজ কয়েকদিন ধরেই এমন হচ্ছে। মমতা বেবিকট থেকে বাচ্চাকে কোলে তুলে নিয়ে খাটে বসে। বাচ্চাটা মমতার ভেজা বুকে মুখ ঘঁষতে থাকে। কাঁদতে কাঁদতে ওর গলা শুকিয়ে গেছে। ঠোঁটের পাতলা চামড়া শুকনো ফাটাফাটা। মমতা কার্ডিগান-ম্যাক্সির বোতাম খুলতে বাচ্চা নিজেই মায়ের বুকে মুখ দেয়। বাচ্চা এখন শান্ত। পরম আনন্দে মায়ের দুধ খাচ্ছে। মমতার সমস্ত শরীর থর থর করে কাঁপতে থাকে। মার্গারেট পর্দার ফাঁক দিয়ে এই স্বর্গীয় দৃশ্য দেখে সরে পড়ে। মনে মনে প্রভুকে ধন্যবাদ জানায়। ওহ্ গড! তুমি আমার মমতাকে দয়া করো। ওকে ভাল রেখো।
Specifications
- বইয়ের লেখক: রাশেদা খালেক
- আই.এস.বি.এন: ৯৮৪৭০২১৪০০৯১১
- স্টকের অবস্থা: স্টক আছে
- ছাড়কৃত মূল্য: ১১৫.০০ টাকা
- বইয়ের মূল্য: ১৫০.০০ টাকা
- সংস্করণ: প্রথম প্রকাশ
- পৃষ্ঠা: ১১০
- প্রকাশক: হাক্কানী পাবলিশার্স
- মুদ্রণ / ছাপা: টেকনো বিডি ইন্টারন্যাশনাল
- বাঁধাই: Hardback
- বছর / সন: ফেব্রুয়ারি - ২০১৩
Sky Poker review bettingy.com/sky-poker read at bettingy.com