অনলাইন ঘোস্ট
উ ৎ স র্গ
আদিত্য এবং অরিত্রকে
যাদের গল্প কখনও ফুরায় না
সূচিপত্র
- অনলাইন ঘোস্ট
- অবিশ্বাস্য
- শঙ্করের সংকট মোচন
- মৃতের প্রতিশোধ
অনলাইন ঘোস্ট
ডাইনিং রুমে খাবার টেবিলে বাসার সবাই নাস্তা করছি। বাবার পাশের চেয়ারে বসেছি। আমি আটাররুটির সাথে ডিম পোচ্ খাচ্ছি। বাবা চেয়ারে বসে পেপার পড়ছেন। পাশের চেয়ারে বসে মা পাঁউরুটিতে জেলি লাগাচ্ছেন। বাবা ডিম ভাজা খান না। ডাক্তারের বারণ আছে।
রাসেদ আমার আসার আগেই নাস্তা শেষ করেছে। এখন চেয়ারে বসে হাত কচলাচ্ছে। স্কুল ড্রেস গায়ে চড়ানো। বাবা অফিস যাওয়ার পথে ওকে স্কুলে নামিয়ে দেবেন।
মা বাবাকে নাস্তা সাজিয়ে দিয়ে শাড়ীর আঁচল সামলে চেয়ারে বসলেন। বললেন, কিরে খোকা তুই কোথাও বের হবি নাকি ? ডিম পোচের শেষ ভাগটা মুখে দিয়ে আড় চোখে বাবাকে দেখলাম। বাবার বাঁ চোখের ভুরু সামান্য উপরে উঠে গেছে। ছোট্ট করে কাশি দিয়ে পেপার থেকে চোখ না তুলেই বললেন, ওর একটা নাম আছে। তুমি কেন ওকে খোকা বলে ডাকছো। তানভীর বললে সমস্যা কোথায় ?
কেন? খোকা বললে অসুবিধা আছে নাকি? নিজের ছেলেকে খোকা ডাকতে পারবো না। কোনো আইন হয়েছে নাকি? মা কিছুটা দুঃখিত হয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন।
বাবা হাতে ধরা খবরের কাগজ টেবিলে রেখে হাসলেন, বললেন, আচ্ছা তুমি খোকাই ডেকো। জহিরকে দেখছি না। কোথায় সে?
ও দরজা আটকে যোগাসন করছে। জানালা দিয়ে দুবার ডেকেছি। তেড়ে এসে জানালা আঁটকে দিলো। মা চোখ-মুখ শক্ত করে ফেললেন।
ঠিক আছে। এমন উত্তেজিত হচ্ছ কেন? বাবা জেলি-রুটি চিবুতে চিবুতে মাকে জিজ্ঞেস করলেন।
জানালা আটকানোর সময় তোমার ভাই আমাকে বললো প্রতিদিন পনের মিনিট পদ্মাসন করতে। আমার মাথা এতে নাকি ঠান্ডা থাকবে। মাথার চুল ঝরা বন্ধ হবে।
বাবা জেলি-রুটি খেতে খেতে ফিক্ করে হেসে ফেললেন। বাবা হাসছেন দেখে রাসেদও শব্দ করে হেসে ফেললো। মা চোখ পাকিয়ে রাসেদের দিকে তাকিয়ে তেজি গলায় বললেন, ক্যাচরা! রানটেনে ছিঁড়ে ফেলবো।
রাসেদ ব্যস্ত হয়ে বাবার রেখে দেওয়া পেপারে চোখ বুলাচ্ছে। বাবা নিঃশব্দে নাস্তা করছেন। দেখে বেশ বুঝতে পারছি উনি হাসি আটকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।
বাহ! তোমরা নাস্তা করছো। জহির কাকা ঘর থেকে বের হয়েছেন। কাকার চুল উস্কখুস্কু হয়ে আছে। চেহারা দেখে মনে হয় উনি কিছু নিয়ে ভাবছেন। চোখগুলো কোঁচকানো। হলুদ রঙের লুঙ্গী আর নীল পাঞ্জাবীতে চাচাকে অদ্ভূত লাগছে।
তোর অফিস কেমন চলছে ? বাবা হাতের সাদা ডায়ালের সিকো ফাইভ ঘড়ির টাইম দেখে চাচাকে জিজ্ঞেস করলেন।
জহির কাকা একটা ক্রাইম রিপোর্ট পত্রিকা চালান। আমি আর রাসেদ চাচার খুব ভক্ত। কাকার কাজ কারবার গোয়েন্দাদের মতো লাগে।
চলছে। তবে একজন লোক বেশ সমস্যা করছে। বলতে বলতে জহির কাকা প্লেটের ডিমপোচ চামচ দিয়ে কাটছেন। ভাল করে দেখে বুঝলাম কাকা ডিম থেকে কুসুমটা ফাঁকা করে ফেলেছেন। কুসুমটা অক্ষত!
সমস্যা করছে? কি ভাবে? বাবা টিস্যু দিয়ে মুখ মুছছেন।
হ্যাঁ! গুরুতর সমস্যা। অনলাইনে ভদ্রলোক সবার কাছে বিচার চেয়ে বেড়াচ্ছন। আদালতের জজ থেকে পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা কাউকে বাদ রাখেননি।
সে কি? অনলাইনে? আশ্চর্য! থানায় গেলেই তো হয়। আর এতে সমস্যাটা কোথায়?
সমস্যা না। থানার ওসি আমার অফিসে এসেছেন। সাহায্য চান। চাচা ডিম রুটি খেতে খেতে বলেন।
আমি তো এতে সমস্যা দেখছি না? ভদ্রোলোককে নিষেধ করলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়।
হু! তাকে পাবে কোথায়? ভদ্রোলোক মারা গেছেন পাঁচ বছর হতে চললো। কথাগুলো বলে কাকা কোঁৎ করে ডিমের কুসুম গিলে ফেললেন।
সে কি! মৃত মানুষ চ্যাট করে কিভাবে? বাবা চেয়ার ছেড়ে উঠতে গিয়েও বসে পাড়লেন। আমি আর রাসেদ শিরদাঁড়া টান টান করে চাচার কথা গিলছি।
তাহলে আর বলছি কি? বিরাট ঝামেলা! ভদ্রলোকের নাম চিন্ময় মুন্সি। ঙহষরহব ঝবপধৎপয দিয়ে ভদ্রলোকের ওউ পাচ্ছি না। কিন্তু প্রমাণ আছে সন্ধ্যা সাতটার পর প্রতিদিন ভদ্রলোকের ওউ অপঃরাব হয়। জনে জনে ধর্না দিচ্ছেন আর হত্যাকারীর বিচার চাচ্ছেন।
এ তো ভূতুড়ে কান্ড দেখছি। বাবা সম্মোহিত হয়ে জহির চাচার গল্প শুনছেন।
তা অদ্ভূৎ বলতে পারো।
কাকার কথা শুনছি আর মনে মনে ভাবছি। আমিও অনলাইনে চ্যাটিং করি। কিছুুদিন আগে মুন্সি নামে একজনের এ্যাড্ রিকোয়েস্ট নিয়েছি। কোন মুন্সি মনে আসছেনা।
কাকা। অনলাইনে মুন্সি নামে আমার একজন বন্ধু আছে। জহির কাকাকে আমার অনলাইন ফ্রেন্ড-এর কথা বললাম।
সে কি! তাকে চিনিস? কথা বলেছিস ? জহির কাকা আমার দিকে ঘুরে বসলেন।
মুন্সি তো অনলাইনে তেমন একটা আসেন না। তার সম্মন্ধে কিছুই জানি না। কাকাকে মুন্সির কথা খুলে বললাম।
তার প্রোফাইলটা আমাকে দিসতো। চিন্ময় মুন্সি হলেও অবাক হবো না। কাকা বিড়বিড় করেন। বাবার সাথে আবার কথা শুরু করলেন। ভদ্রলোক পাঁচ বছর আগে নিখোঁজ হন। থানায় মিসিং ডায়রি আছে। কাকা কথাগুলো বলে পানি খাওয়ার জন্য গ্লাসে হাত রাখলেন।
মিসিং! নিরুদ্দেশ! থানায় ডায়রী আছে বলছিস। তাহলে ভদ্রলোক মৃত একথা বলছিস কিভাবে? বাবা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে গোয়েন্দাদের মতো প্রশ্ন করেন।
তা অবশ্য ঠিক। জহির কাকা মাথার চুল হাতাতে হাতাতে বললেন।
আইনের কথা বাদ দে। চিন্ময় মুন্সি যে গা ঢাকা দিয়ে নেই তুই নিশ্চিত হচ্ছিস কিভাবে? এমন ও তো হতে পারে কোনো বিশেষ কারণে ভদ্রলোক গা ঢাকা দিয়ে আছেন।
বাবা যুক্তি দিয়ে কথাগুলো বললেন। আমি আর রাসেদ কাকার দিকে তাকিয়ে আছি। কি বলেন শোনার জন্য।
দাদা। চিন্ময় মুন্সির বড় ব্যবসা আছে। হাজার লোক ওর কোম্পানিতে কাজ করেন। তাছাড়া আজ জানুয়ারির ১৩ তারিখ। ১৭ তারিখ থেকে ওর উইল কার্যকর হবে। সে কেন খামাখা নিজের সম্পত্তি ছেড়ে গা ঢাকা দিয়ে থাকবে? জহির কাকা কমলালেবুর খোসা ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
হা:হা:হা:। তাই অনলাইনে ভূত হয়ে এসেছেন সম্পত্তির ভাগ যাতে না দিতে হয়। বাবা হাসতে হাসতে চেয়ার ছেড়ে উঠলেন। অফিস যাবেন। রাসেদ বাবার সঙ্গ নেয়। যাত্রা পথে রাসেদকে স্কুলে নামিয়ে দেবেন।
কিন্তু সে তো বলছে তাকে খুন করা হয়েছে। জহির কাকা কমলার কোয়া খুলে বিভ্রান্ত চোখে আমার দিকে তাকান।
কাকা! কেউ খুন হলে তিনি কিভাবে বলবেন যে তিনি খুন হয়েছেন? আমার প্রশ্ন শুনে আমি নিজেই অবাক হলাম। নিজেকে অনেক বুদ্ধিমান মনে হলো। বাবার মতন!
রাইট! কিন্তু কেন এমন করবে। নির্ঘাত ধরা খাবে। গাধা নাকি সে?
এই জহির। তুমি কাকে গাধা বলছো? মা পাকঘরে ছিলেন। কখন এসেছেন লক্ষ্যই করিনি।
এক অভাগাকে ভাবি। যে নিজেকে মৃত বলে দাবি করছে। আমার ঘরে এককাপ চা পাঠিয়ো প্লীজ। মাথার চুল হাতাতে হাতাতে জহির কাকা তার ঘরে ঢুকে দরজা আঁটকে দিলেন।
সে কি? মা আঁতকে উঠেন। শাড়ীর আঁচল দিয়ে মুখ মুছে আমাকে বললেন, ‘পদ্মাসন করে করে তোর চাচার মাথাই আউট হয়ে গেছে। কেমন এলোমেলো বকছে দেখেছিস।
আমি হেসে ফেললাম। মাকে দোষ দেওয়া যায় না। কোন কথা অর্ধেক শুনলে কখনোই আসল কথা বুঝা যায় না।
রাত দশটা বাজে। বাবার সাথে ডাইনিং টেবিলে খেতে বসেছি। রাসেদ আগেই ডিনার সেরে নিজের ঘরে চলে গেছে।
বাবা আমাকে প্লেটে খাবার বেড়ে নিজের জন্য ভাত নিচ্ছেন।
জহির কাকা একঘন্টা আগে অফিস থেকে ফিরেছেন। এখন গোসল সেরে বাবার পাশে এসে বসলেন।
কাকা যখন কোন সমস্যায় পড়েন তখন ডাইনিং রুমে এসে বাবার জন্য অপেক্ষা করেন।
কিছু বলবি নাকি? বাবা মুখে ভাত নিয়ে কাকাকে জিজ্ঞেস করেন।
হ্যাঁ! দাদা। চিন্ময় মুুন্সির বাড়ী গিয়েছিলাম আজ। বিরাট বড় ধাক্কা খেলাম।
কেন? ইন্টারেস্টিং কিছু? বাবা বাটি থেকে রান্না করা গরুর ঝাল রেজালা নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন।
হ্যাঁ দাদা। চিন্ময় মুন্সির পরিবার বলতে স্ত্রী, শালা ও শালার বউ। নিজের কোন সন্তান ছিলো না। বিয়ের পর শালাকে নিজের কাছে নিয়ে এসে পেলে-পুশে বড় করেছেন। শতীশ হাওলাদার ওর শালার নাম। প্লেটে ডাল বেড়ে নিতে নিতে চাচা থামলেন।
সেকি কথা। নিজের রক্তের কেউ নেই? বাবা তরকারির বাটিতে চর্বি ছাড়া মাংস খুঁজছেন।
এক ভাই আছে, ছোট ভাই আমেরিকায় থাকেন। বুড়ো মা আছেন। ছেলের উইল হবে শুনে ঢাকায় এসেছেন।
সেকি? অংশিদার তো দেখছি অনেক। চিন্ময় মুন্সির ব্যবসা দেখছে কে? বাবা কৌতুহলী হয়ে বললেন।
আগে, মানে মুন্সি বেঁচে থাকতে ওর বন্ধু কাইয়ুম পোদ্দার নামে এক ভদ্রলোকের সাথে পাটর্নারশিপে ব্যবসা করতেন। মুন্সির নিরুদ্দেশের ছয় মাসের মাথায় মিসেস মুন্সির কাছে পাটর্নারশিপ বেচে পুরোপুরি অবসর নিয়েছেন তিনি। এখন কিছুই করেন না। সারা সময়ই নিজের বাসায় থাকেন।
Specifications
- বইয়ের লেখক: মাহাবুব-উর-রসিদ
- আই.এস.বি.এন: ৯৮৪৭০২১৪০০৭৯৯
- স্টকের অবস্থা: স্টক আছে
- ছাড়কৃত মূল্য: ৭৫.০০ টাকা
- বইয়ের মূল্য: ১০০.০০ টাকা
- সংস্করণ: প্রথম প্রকাশ
- পৃষ্ঠা: ৭২
- প্রকাশক: হাক্কানী পাবলিশার্স
- মুদ্রণ / ছাপা: টেকনো বিডি ইন্টারন্যাশনাল
- বাঁধাই: Hardback
- বছর / সন: ফেব্রুয়ারি ২০১২
Sky Poker review bettingy.com/sky-poker read at bettingy.com